শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন

বাঘায় স্বপ্ন নিয়ে সোনালী আশ কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা

আব্দুল হানিফ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) থেকে॥ রাজশাহীর বাঘায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫’শ ৭০ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। এবারে উপজেলায় পাটচাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৬২৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ৩ টন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, পাটপণ্যের দ্বিগুণ রপ্তানি বৃদ্ধি, পণ্যের মোড়কে পাটের ব্যাগ বাধ্যতামূলকসহ ব্যবহারে বহুমাত্রিকতায় এবার পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। এর মধ্যে কিছু জমিতে বেআর-৫২৪ জাতের পাট রোপণ করা হয়েছে সারিবদ্ধভাবে। ভারতীয় জাতের পাট আবাদ হয়েছে বেশি। পাশাপাশি দেশি তোষা পাটের বীজ রোপণ করেছেন কম। উদ্ভাবিত ওই জাত সাধারণ তোষা পাটের জাত থেকে কমপক্ষে ২০ শতাংশ বেশি ফলন হবে। এর উচ্চতা সাধারন পাটের চেয়ে ২০ সেন্টিমিটার বেশি। সাধারণ তোষা পাট কাটার সময়ের তুলনায় নতুন এই জাত ২০ দিন আগে কাটা যাবে। সময় বেঁচে যাওয়ায় একই জমিতে আমন চাষে সুবিধা পাবেন কৃষক। সাধারণ পাটের আগা চিকন ও গোড়া মোটা হয়, বেআর ৫২৪ জাতের আগা-গোড়া সমান। শ্রাবনের ঝরা বৃষ্টির পানিতে এসব পাট পচিয়ে আগে ভাগে ঘরে তুলতে চায় কৃষকরা। এজন্য পাট কেটে জাগ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাজারো কৃষক। তবে উৎপাদন খরচের সঙ্গে বাজার মূল্যের অসমতার কারণে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। গত দুই বছর আগেও সোনালি আঁশের ফলন ও দাম দুটোই ছিল কাঙ্খিত। পাটের সুদিন ফিরলো বলে আশায় বুক বেঁধেছিল চাষিরা। কিন্তু গত বছর বাজারে দাম না থাকায় সোনালি আঁশ নিয়ে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে তাদের।

সরেজমিন উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল দিগন্ত জোড়া পাট। দেখে মনে হয় সবুজের গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝে মাঝে বাতাস বয়ে যাওয়ায় হেলেদুলে উঠছে পাট পাতা ও গাছগুলো। এই গ্রামেরই একজন কৃষক মোজাফফর। ক্ষেতে শ্রমিকের সাথে নিজেও পাট কাটছেন তিনি। গতবার এই জমিতে পাট চাষ করেছেন তিনি।

কথা হলে মোজাফফর বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট উৎপাদনে হাল চাষ, সার, বীজ কিনতে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার টাকা। জমিতে নিড়ানি দিতে খরচ হয়েছে ৩ হাজার টাকা। পাট কাটা ও জাগ দিতে ৪ হাজার টাকা খরচ হবে। এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে একজন কৃষকের ব্যয় হয় ৯ হতে ১০ হাজার টাকা। অথচ একবিঘা জমিতে ভালো আবাদ হলে পাট পাওয়া যায় ৮ মণ। গতবার উঠতি বাজারে মণ প্রতি ১১শ’-১২শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতে কৃষককে বিঘা প্রতি এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণতে হয়েছে। এবার যে কি হবে সেটা নিয়ে শঙ্কায় আছি। সাড়ে ৪বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন বলে জানান তিনি।

গড়গড়ির পাট চাষি শফিকুল জানান, ‘আষাঢ়ে বৃষ্টির দেখা না পেলেও শ্রাবনে বৃষ্টি পেয়ে পাট জাগ দিতে সুবিধা হচ্ছে। সবাই এখন পাট কেটে জাগ দেওয়ার জন্য খালে-বিলে জমা হচ্ছে। তাই তাড়াতাড়ি করে পাট কাটা শুরু করেছেন। এবার ১২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। ‘পাট কেটে এই জমিতেই আমন ধান লাগাবেন বলে জানান তিনি।

আরেক চাষি আফজাল বলেন, এ বছর ১০ বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় পাট গাছ বেশ ভালো হয়েছে। বাজারে পাটের দাম ভালো হলে এ বছর একটু লাভের মুখ দেখবেন এসব কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে পাট চাষীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে পাট পচানোর জন্য পাট কাটতে। তবে পাট কাটা দিন মজুরের বেশ অভাব রয়েছে। এর আগে যে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ২৫০-৩০০ টাকা ছিল এখন ৩৫০ টাকা দিয়েও পর্যাপ্ত পাওয়া যাচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম বলেন, ‘এ বছর পাটের রোগবালাই ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। এবার পাটের ফলন ভালো হবে বলে মনে করছেন তিনি। বাজার ভালো থাকলে আগামীতে আবারো বেশি আবাদ হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com